বাচ্চাদের ভ্যাকসিন (Vaccine) হল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যা শিশুদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, যা তাদের ভবিষ্যতে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশে বাচ্চাদের রুটিন ভ্যাকসিনেশন চার্ট (EPI Schedule):
বাংলাদেশে Expanded Program on Immunization (EPI) এর অধীনে নিম্নলিখিত ভ্যাকসিনগুলো বিনামূল্যে প্রদান করা হয়:
1. জন্মের পরপরই (At Birth):
– বিসিজি (BCG): যক্ষ্মা (Tuberculosis) প্রতিরোধের জন্য।
– ওপিভি-০ (OPV-0): পোলিও (Polio) প্রতিরোধের জন্য।
2. ৬ সপ্তাহ বয়সে (6 Weeks):
– পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন-১ (Pentavalent-1): ডিপথেরিয়া (Diphtheria), টিটেনাস (Tetanus), হুপিং কাশি (Pertussis), হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B), এবং হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (Hib) প্রতিরোধের জন্য।
– ওপিভি-১ (OPV-1): পোলিও প্রতিরোধের জন্য।
– পিসিভি-১ (PCV-1): নিউমোনিয়া (Pneumonia) প্রতিরোধের জন্য।
– রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন-১ (Rotavirus-1): ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য।
3. ১০ সপ্তাহ বয়সে (10 Weeks):
– পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন-২ (Pentavalent-2): দ্বিতীয় ডোজ।
– ওপিভি-২ (OPV-2): দ্বিতীয় ডোজ।
– পিসিভি-২ (PCV-2): দ্বিতীয় ডোজ।
– রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন-২ (Rotavirus-2): দ্বিতীয় ডোজ।
4. ১৪ সপ্তাহ বয়সে (14 Weeks):
– পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন-৩ (Pentavalent-3): তৃতীয় ডোজ।
– ওপিভি-৩ (OPV-3): তৃতীয় ডোজ।
– পিসিভি-৩ (PCV-3): তৃতীয় ডোজ।
5. ৯ মাস বয়সে (9 Months):
– এমআর-১ (MR-1): ম (Measles) এবং রুবেলা (Rubella) প্রতিরোধের জন্য।
– ওপিভি-৪ (OPV-4): চতুর্থ ডোজ।
6. ১৫-১৮ মাস বয়সে (15-18 Months):
– এমআর-২ (MR-2): দ্বিতীয় ডোজ।
– ডিটিপি বূস্টার-১ (DTP Booster-1): ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, এবং হুপিং কাশি প্রতিরোধের জন্য।
7. ৫ বছর বয়সে (5 Years):
– ডিটিপি বূস্টার-২ (DTP Booster-2):দ্বিতীয় ডোজ।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন:
– হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A): লিভার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য।
– টাইফয়েড ভ্যাকসিন (Typhoid Vaccine): টাইফয়েড প্রতিরোধের জন্য।
– ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন (Influenza Vaccine): ফ্লু প্রতিরোধের জন্য।
– চিকেনপক্স ভ্যাকসিন (Chickenpox Vaccine): জলবসন্ত প্রতিরোধের জন্য।
– হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) ভ্যাকসিন: সার্ভিকাল ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য (মেয়েদের জন্য ৯-১৪ বছর বয়সে)।
ভ্যাকসিনের গুরুত্ব:
– ভ্যাকসিন শিশুদের মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
– এটি রোগের বিস্তার রোধ করে এবং সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
– ভ্যাকসিনের মাধ্যমে অনেক রোগ (যেমন পোলিও, হাম) প্রায় নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে।
ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
– সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জ্বর, ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা বা ফোলা।
– গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই বিরল।
মনে রাখবেন:
– ভ্যাকসিনের সময়মতো ডোজ নিশ্চিত করুন।
– ভ্যাকসিন কার্ড সংরক্ষণ করুন এবং প্রতিটি ডোজ নেওয়ার পর তা আপডেট করুন।
– কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা থাকলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।