নবজাতকের জন্ডিস (Neonatal Jaundice) হল একটি সাধারণ অবস্থা যা নবজাতক শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এটি প্রধানত শিশুর রক্তে বিলিরুবিন (Bilirubin) নামক পদার্থের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়। বিলিরুবিন হল লাল রক্তকণিকা ভাঙার সময় উৎপন্ন হওয়া একটি হলুদ রঞ্জক পদার্থ। নবজাতকের লিভার সম্পূর্ণরূপে বিকশিত না হওয়ায়, এই বিলিরুবিন সঠিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে না, ফলে জন্ডিস দেখা দেয়।
নবজাতক জন্ডিসের কারণ:
1. **শারীরিক জন্ডিস (Physiological Jaundice):
– এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরন এবং প্রায় ৬০% পূর্ণ মেয়াদী শিশু এবং ৮০% অপরিপক্ক শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
– সাধারণত জন্মের ২-৪ দিন পর শুরু হয় এবং ১-২ সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়।
2. **মায়ের দুধের জন্ডিস (Breastfeeding Jaundice):
– শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের দুধ না পেলে বা কম খেলে এই ধরনের জন্ডিস হতে পারে।
– এটি সাধারণত জন্মের প্রথম সপ্তাহে দেখা যায়।
3. **মায়ের দুধের কারণে জন্ডিস (Breast Milk Jaundice):**
– মায়ের দুধে থাকা কিছু উপাদান বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে।
– এটি জন্মের ১ সপ্তাহ পর শুরু হয় এবং কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
4. **রক্তের গ্রুপ অসামঞ্জস্য (Blood Group Incompatibility):**
– মা এবং শিশুর রক্তের গ্রুপ আলাদা হলে (যেমন Rh বা ABO অসামঞ্জস্য) শিশুর রক্তকণিকা ভেঙে যেতে পারে, ফলে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
5. **অন্যান্য কারণ:
– সংক্রমণ (Infection)
– জন্মগত লিভারের সমস্যা
– জেনেটিক বা বিপাকীয় রোগ
লক্ষণ:
– শিশুর ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া।
– অলসতা বা বেশি ঘুমানো।
– খাওয়ার অভ্যাস কমে যাওয়া।
– প্রস্রাব গাঢ় হলুদ রঙের হওয়া।
– মলের রঙ হালকা হওয়া।
চিকিৎসা:
1. **ফটোথেরাপি (Phototherapy):
– এটি সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশেষ নীল আলো ব্যবহার করে শিশুর ত্বকের বিলিরুবিন ভেঙে ফেলা হয়, যাতে তা প্রস্রাব ও মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে।
2. **এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন (Exchange Transfusion):
– যদি বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি হয় এবং ফটোথেরাপি কাজ না করে, তবে শিশুর রক্ত বদলে দেওয়া হতে পারে।
3. **পর্যাপ্ত দুধ খাওয়ানো:
– শিশুকে নিয়মিত মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে বিলিরুবিন দ্রুত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
কখন ডাক্তার দেখাবেন:
– শিশুর ত্বক ও চোখের হলুদ ভাব বাড়তে থাকলে।
– শিশু খুব অলস বা অসুস্থ মনে হলে।
– খাওয়া-দাওয়া কমে গেলে।
– জ্বর বা অন্যান্য অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে।
প্রতিরোধ:
– জন্মের পর নিয়মিত চেকআপ করানো।
– শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ খাওয়ানো।
– জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
নবজাতক জন্ডিস সাধারণত বিপজ্জনক নয়, তবে সময়মতো চিকিৎসা না করালে এটি মারাত্মক হতে পারে, যেমন কার্নিকটেরাস (Kernicterus) নামক মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। তাই সচেতন থাকা এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।